উপাচার্য এবং চ্যান্সেলর, উভয় পদই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদিও তারা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িত, তাদের ভূমিকা এবং দায়িত্বে বেশ ভিন্নতা রয়েছে। চ্যান্সেলর হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রধান, অন্যদিকে উপাচার্য হলেন প্রশাসনিক ও একাডেমিক প্রধান।
উপাচার্য ও চ্যান্সেলরের মধ্যেকার প্রধান পার্থক্যগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
ভূমিকা এবং দায়িত্ব
উপাচার্য:
- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা: উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করেন।
- একাডেমিক নেতৃত্ব: শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নয়ন এবং নতুন কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত নেন।
- প্রশাসন: শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি এবং শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন।
- অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা: বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট তৈরি ও অর্থ ব্যয়ের তত্ত্বাবধান করেন।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন।
- সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা পরিচালনা করেন।
চ্যান্সেলর:
- বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রধান: রাষ্ট্রপতি/ গভর্ণর এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।
- দীক্ষান্ত समारोहের সভাপতিত্ব: গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান করেন।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সভাগুলোতে যোগদান করেন।
- উপাচার্য নিয়োগ: সাধারণত চ্যান্সেলর উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধানে পরিবর্তন বা নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ক্ষমতা
উপাচার্য:
উপাচার্যের ক্ষমতা প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য দায়বদ্ধ।
চ্যান্সেলর:
চ্যান্সেলরের ক্ষমতা মূলত আনুষ্ঠানিক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হলেও দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজে সরাসরি যুক্ত থাকেন না।
যোগ্যতা
উপাচার্য:
উপাচার্য সাধারণত একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক হয়ে থাকেন। তার প্রশাসনিক দক্ষতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক।
চ্যান্সেলর:
চ্যান্সেলর সাধারণত দেশের রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল হন। এই পদের জন্য একাডেমিক যোগ্যতার চেয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের পদটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়োগ প্রক্রিয়া
উপাচার্য:
একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের মাধ্যমে উপাচার্য নির্বাচন করা হয়। এই প্যানেলে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকেন।
চ্যান্সেলর:
চ্যান্সেলর সাধারণত রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল হওয়ার সুবাদে এই পদটিতে অধিষ্ঠিত হন।
কার্যকাল
উপাচার্য:
উপাচার্যের কার্যকাল সাধারণত ৪ বছর হয়ে থাকে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এটি নবায়ন করা যেতে পারে।
চ্যান্সেলর:
চ্যান্সেলরের কার্যকাল রাষ্ট্রপতির মেয়াদকালের উপর নির্ভরশীল।
বৈশিষ্ট্য | উপাচার্য | চ্যান্সেলর |
---|---|---|
পদমর্যাদা | বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক প্রধান | বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রধান |
ভূমিকা | বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা | দীক্ষান্ত समारोहের সভাপতিত্ব করা, উপাচার্য নিয়োগ |
ক্ষমতা | প্রশাসনিক ও একাডেমিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত | আনুষ্ঠানিক |
নিয়োগ প্রক্রিয়া | প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচন | রাষ্ট্রপতি/ রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত |
যোগ্যতাসমূহ | শিক্ষাবিদ, প্রশাসনিক দক্ষতা | রাষ্ট্রপ্রধান |
কার্যকাল | সাধারণত ৪ বছর | রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পর্যন্ত |
উপসংহার
উপাচার্য এবং চ্যান্সেলর উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি ও শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রধান হিসেবে সামগ্রিক তত্ত্বাবধান করেন। উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।