ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংঘ (ডাকসু) নির্বাচন সবসময়ই দেশের রাজনীতির এক ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি। এখানে যে দল বা মতাদর্শ প্রাধান্য পায়, তা প্রজন্মের রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ করে। ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল এখনো সম্পূর্ণ ঘোষিত হয়নি, তবে প্রাথমিক ফলাফলই যথেষ্ট আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া
- ভোট হয় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
- মোট ৫২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
- পরিবেশ তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ থাকলেও, ফলাফল ঘোষণার সময় উত্তেজনা ও জটলা দেখা দেয়।
প্রাথমিক ফলাফল: কে কোথায় এগিয়ে?
প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত ভোটের হিসাব অনুযায়ী, শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে এগিয়ে আছেন।
টেবিল: ডাকসু ২০২৫ নির্বাচনের মূল পদগুলোর প্রাথমিক ফলাফল
পদ | প্রার্থী | দল/প্যানেল | প্রাপ্ত ভোট | প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী | প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট |
---|---|---|---|---|---|
উপ-সভাপতি (VP) | শাদিক কায়েম | শিবির-সমর্থিত | ৭,৫১৬ | আবিদুল ইসলাম খান (ছাত্রদল) | ৩,৬৫৩ |
সাধারণ সম্পাদক (GS) | এস. এম. ফরহাদ | শিবির-সমর্থিত | ২,০১৯ | তানভীর বারি হামিম (ছাত্রদল) | ৮১০ |
সহ-সাধারণ সম্পাদক (AGS) | ফলাফল গণনা চলমান | — | — | — | — |
(তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা)
কেন এই ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ?
১. রাজনৈতিক পালাবদলের ইঙ্গিত:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের প্রাধান্যে ছিল। তবে এবার প্রধান লড়াই হয়েছে ছাত্রদল বনাম শিবির সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে, যা বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দেয়।
২. শিবিরের শক্তি পুনরুজ্জীবন:
৯০-এর দশক পর থেকে ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের শক্ত উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। এবারের ফলাফল তাদের পুনরুত্থান নির্দেশ করছে।
৩. ছাত্রদলের ঘাটতি:
ছাত্রদল প্রার্থীরা এখনো প্রতিযোগিতায় আছেন, তবে ভোটের ব্যবধান শিবিরের পক্ষে। এর মানে সংগঠনটি মাঠে কার্যকর উপস্থিতি দেখাতে পারলেও কৌশলগত দুর্বলতা রয়েছে।
৪. শিক্ষার্থীদের বার্তা:
একাংশ মনে করছে, এ ভোট ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে অন্য দলগুলো কতটা শিক্ষার্থীদের আস্থা পেতে পারে তার পরীক্ষা।
ভোটারদের অভিজ্ঞতা
অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, এবার ভোট দিতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন—সহিংসতা বা বড় ধরণের গোলযোগ হয়নি। তবে ভোট গণনায় ধীরগতি ও ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ায় উৎকণ্ঠা তৈরি হয়।
সামনের দিক নির্দেশনা
- চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বলা কঠিন, তবে বর্তমান প্রবণতা স্পষ্ট করে দিচ্ছে শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে।
- এ ফলাফল যদি বজায় থাকে, তবে জাতীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে—বিশেষ করে বিরোধী দলের কৌশল পুনর্গঠনে।
✍️ শেষ কথা:
ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই বাংলাদেশের রাজনীতির ‘মিনি ল্যাব’। ২০২৫ সালের এই নির্বাচনে ভোটাররা যে বার্তা দিয়েছেন, তা ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ এবং জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশ—দুটোকেই প্রভাবিত করবে। এখন সবার চোখ চূড়ান্ত ফলাফলের দিকে।