নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চরণের সময় ধ্বনিবাহী বাতাস মুখবিহ্বরের স্থানে সম্পূর্ণ বাধা পেয়ে তা নাক দিয়ে নির্গত হতে থাকে। বাংলায় নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি ৩টি— ঙ্, ন্, ম্ (এই ৩টিই ঘোষধ্বনি)। তবে বাংলায় নাসিক্য ব্যঞ্জনবর্ণ ৭টি— ঙ্, ঞ্, ণ্, ন্, ম্, ং, ঁ (এই ৭টিই ঘোষধ্বনি)।
এই বর্ণ বা প্রতীকগুলো উচ্চারণের সময় নাসিকার সাহয্য প্রয়োজন হয়, তাই এগুলোকে আনুনাসিক বা নাসিক্য বর্ণ বলে।
ধ্বনি আর বর্ণের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। যা বুঝানোর চেষ্টা করছি। বিস্তারিত জানানর জন্য আমার বই কিংবা পরবর্তী পোস্ট-এর জন্য অপেক্ষা করুন।
ধ্বনির ও বর্ণের সংজ্ঞা ও পার্থক্য:-
মানুষের মুখে যা উচ্চারণ করে তা হল ধ্বনি (speech sound); আর সেই ধ্বনির লিখিত রূপ বা ধ্বনি নির্দেশক চিহ্ন বা প্রতিক বা সাংকেতিক চিহ্ন বা দৃশ্য রূপকে বলে বর্ণ (Letter)। এক কথায় ধ্বনি হচ্ছে উচ্চারণের মাধ্যম আর বর্ণ হচ্ছে লিখার মাধ্যম। প্রায় সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে না। তাই ৫টি উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি। যেমন— অ, আ, অ্যা, ক, ক্যা- এখানে প্রত্যেকটিই ধ্বনি কারণ উচ্চারণ করা যায়। তবে প্রত্যেকটি বর্ণ নয়; কারণ বাংলা ভাষায় মোট বর্ণ সংখ্যা আছে ৫০টি। কিন্ত বাংলা ভাষায় বর্ণমালা ১ টি। ৫০ টি বর্ণ মিলে মালা হয়েছে ১ টি। এই ৫০টি বর্ণের মধ্যে ৩টি (অ, আ, ক) আছে তাই এই ৩টি বর্ণ হবে, আর ২টি (অ্যা, ক্যা) ওই ৫০টি বর্ণের মধ্যে নেই, তাই এগুলো বর্ণ হিসেবে ধরা হবে না; কেবল ধ্বনি হিসেবেই থাকবে। আশা করি কিছুটা বুঝতে পেরেছেন।
এবার আলোচ্য প্রশ্নে ফিরে যাওয়া যাক, নাসিক্য বর্ণ ৭টি (ঙ, ঞ, ণ, ন, ম, ং, ঁ) কারণ ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে এই বর্ণগুলিও আছে। কিন্তু নাসিক্য ধ্বনি ৩টি (ঙ, ন, ম) কারণ ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি হলেও ব্যঞ্জনধ্বনি ৩৯টি নয়; ব্যঞ্জনধ্বনি মাত্র ৩০টি। ( যদিও কেউ কেউ, ৩১, ৩২ এবং ৩৪ টির কথা বলেন) অর্থাৎ কয়েকটি বর্ণের রূপ আলাদা হলেও উচ্চারণের/ ধ্বনির রূপ একই। উদাহরণস্বরূপ নাসিক্য ধ্বনিতে বাদ পরা বর্ণ ৪টি দেখব।
‘ণ’ বর্ণের আর ‘ন’ বর্ণের উচ্চারণ একই। যেমন— ধরণ-ধরন, আপণ-আপন, মণ-মন ইত্যাদি। লক্ষ করুন, বর্ণ আলাদা কিন্তু উচ্চারণ একই তাই ‘ণ’—কে ধ্বনি হিসাবে ধরা হয় না।
‘ঞ’ বর্ণের আর অঁ-এর মতো। আবার, ঞ-র সঙ্গে (চ, ছ, জ, ঝ) যুক্ত হলে ঞ-র ধ্বনি ন-র মতো হয়। যেমন: অঞ্চল-অন্ চল। চ-র পরে ঞ যুক্ত করলেও ঞ-র ধ্বনি ন-র মতো থাকে। যেমন: যাচ্ঞা- জাচ্ না। কিন্তু শব্দের প্রথমে জ্ঞ থাকলে জ্ঞ এর পরিবর্তে ‘গ্যাঁ এর ‘মতো হয়। যেমন: জ্ঞান-গ্যাঁন্, মাঝে থাকলে ‘গগ্যাঁ’ এর মতে হয়। যেমন – বিজ্ঞান- বিগ্ গ্যাঁন্, আবার শেষে থাকলে ‘গগোঁ’ এর মতো হবে। যেমন – বিজ্ঞ- বিগ্ গোঁ ইত্যাদি।
‘ং’ বর্ণটি অন্তস্বরবিহীন ‘ঙ্’ বর্ণের মতই উচ্চারণ হয়। যেমন: রং—রঙ্, ঢং—ঢঙ্। তাই ‘ং’-কে ধ্বনি হিসেবে গণ্য করা হয় না।
‘ঁ’ চন্দ্রবিন্দু আনুনাসিক ধ্বনির প্রতীক। এটি কেবল স্বরবর্ণ বা স্বরের সঙ্গে যুক্ত হয় নিরপেক্ষভাবে এর উচ্চারণ অসম্ভব। যেনম: দন্ত > দাঁত, বন্ধন > বাঁধন, বন্ধ > বধুঁ। চন্দ্রবিন্দু ( ঁ) কখনো ‘ম’এর রূপও ধারণ করে (ওঁ> ওম্)। তাই চন্দ্রবিন্দু ( ঁ)-কে ধ্বনি হিসেবে গণ্য করা হয় না।