রাসেল ভাইপার সাপের ইতিহাস

রাসেল ভাইপার, যার বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এক বিখ্যাত ও বিষাক্ত সাপ। এর নামকরণ হয়েছে স্কটিশ প্রকৃতিবিদ প্যাট্রিক রাসেলের (Patrick Russell) নামানুসারে, যিনি ভারতীয় সাপ সম্পর্কে বিস্তৃত গবেষণা করেছেন।

রাসেল ভাইপার সাপের ইতিহাস:

  1. রাসেল ভাইপার সাপের নামকরণ করা হয়েছে স্কটিশ সার্জন এবং প্রকৃতিবিদ প্যাট্রিক রাসেলের নামে।
  2. ১৭৮১ সালে ভারতে এসে তিনি স্থানীয় সাপ, বিশেষ করে বিষধর সাপ সম্পর্কে গবেষণা শুরু করেন।
  3. তিনি যে সাপগুলোকে শনাক্ত করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল “কাতুকা রেকুলা পোদা” (Katuka Rekula Poda), যা বর্তমানে রাসেল ভাইপার নামে পরিচিত।

রাসেল ভাইপার: বিস্তারিত বিবরণ

  • আকার ও রঙ: রাসেল ভাইপার সাধারণত মাঝারি থেকে বড় আকারের হয়। এদের দেহের রঙ হলুদাভ, বাদামী বা ধূসর, এবং সারা শরীরে তিন সারি কালো, সাদা ও বাদামী রঙের গোলাকার বা ডিম্বাকার দাগ থাকে।
  • অবস্থান: রাসেল ভাইপার মূলত ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পাওয়া যায়।

শ্রেণিবিন্যাস এবং বিবর্তন

  • পরিবার: Viperidae
  • উপপরিবার: Viperinae
  • প্রজাতি: Daboia russelii
  • বৈজ্ঞানিক নাম: Daboia russelii

রাসেল ভাইপারদের বৈজ্ঞানিক নাম “Daboia” এসেছে হিন্দি শব্দ “दबोया” থেকে, যার অর্থ “লুকিয়ে থাকা”। এটি তাদের লুকিয়ে থাকার এবং শিকার ধরার আচরণের প্রতি ইঙ্গিত করে।

শারীরিক বৈশিষ্ট্য

  • আকার: রাসেল ভাইপার সাধারণত ৪ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
  • রঙ: দেহের রঙ হলুদাভ, বাদামী বা ধূসর হয়। তাদের দেহে কালো ও সাদা রঙের ডিম্বাকার দাগ দেখা যায়।
  • স্কেল: তাদের স্কেলের মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য সাপের থেকে আলাদা। স্কেলের উপর দাগ ও রঙের পরিবর্তন সহজেই চিহ্নিত করা যায়।

বাসস্থান এবং ভৌগোলিক অবস্থান

  • অবস্থান: রাসেল ভাইপার ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়।
  • বাসস্থান: তারা সাধারণত শুষ্ক ও আর্দ্র এলাকা, খোলা মাঠ, চাষের জমি, এবং বনের আশেপাশে বসবাস করে।

আচরণ এবং জীবনধারা

  • আচরণ: রাসেল ভাইপাররা মূলত নিশাচর, অর্থাৎ রাতে সক্রিয় থাকে। তবে দিনের বেলায়ও এদের দেখা যায়।
  • প্রজনন: রাসেল ভাইপার জীবিত বাচ্চা জন্ম দেয়। একবারে এরা ২০-৬০টি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে।

বিষ এবং এর প্রভাব

  • বিষের ধরন: রাসেল ভাইপারের বিষ হেমোটক্সিক এবং নিউরোটক্সিক। অর্থাৎ এটি রক্ত এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে।
  • প্রতিক্রিয়া: কামড়ানোর পর তীব্র ব্যথা, ফোলা, রক্তপাত, কিডনি ক্ষতি, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, এবং হেমোলাইটিক এনিমিয়া দেখা দিতে পারে।
  • মৃত্যুর ঝুঁকি: রাসেল ভাইপারের কামড়ে অনেক সময় মৃত্যু হতে পারে, বিশেষ করে যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়।

চিকিৎসা এবং প্রতিকার

  • প্রথমিক চিকিৎসা: কামড়ানোর পর দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আক্রান্ত অঙ্গ স্থির রাখতে হবে এবং আহত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
  • বিষের প্রতিশেধক: রাসেল ভাইপারের কামড়ের জন্য বিশেষ ধরনের প্রতিশেধক (antivenom) ব্যবহার করা হয়, যা বিষের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

সংরক্ষণ এবং সুরক্ষা

  • সংরক্ষণ অবস্থা: রাসেল ভাইপার এখনও বিপন্ন প্রজাতি নয়, তবে তাদের আবাসস্থল ধ্বংস এবং শিকারের কারণে সংখ্যা কমছে।
  • মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষ: মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষ এদের জন্য বড় হুমকি। তাই এদের সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

রাসেল ভাইপারের গুরুত্ব

রাসেল ভাইপার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পরিচিত এবং ভয়ঙ্কর সাপ। এদের কামড় থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে, এদের সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা উচিত, কারণ এরা পরিবেশের খাদ্য শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Leave a Comment