হায়ারোগ্লিফিক হল মিশরীয় লিপি । যা দেয়ালে খোদাই করা প্রাচীন লেখা কে বোঝায় ।
মিসরীয় ‘হায়ারোগ্লিফিক’ বা মিসরীয় চিত্রলিপির বহুবাচনিক শব্দ হল মিশরীয় ‘হায়ারোগ্লিফিক্স’ অর্থাৎ মিশরীয় লিপিবিশেষ। প্রাচীন মিশরে তিন ধরণের লিপির প্রচলন ছিল। লিপিগুলো হচ্ছে হায়ারোগ্লিফিক, হায়রাটিক ও ডেমোটিক। গ্রীকরাই এই নামকরণ করেছে। হায়রাটিক শব্দের অর্থ ‘পুরোহিত সম্পর্কিত’। এটি ছিল হায়ারোগ্লিফিক লিপির সরল সংকলন। এর উদ্ভবের ফলে মিসরীয় সাহিত্যের সফল সূত্রপাত ঘটে। প্যাপিরাস প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মিসরীয়রা প্যাপিরাসকে লিখন উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে আর প্যাপিরাসে লেখার সুবিধা থেকেই উদ্ভব হয় হায়রাটিক লিপির।
হায়ারোগ্লিফিকের বৈশিষ্ট্য ছিল শব্দলিপি ও অক্ষরলিপি নির্ভর। উদ্ভবের কাল থেকে বিলুপ্তি পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত ছিল। এগুলোর অক্ষরলিপি ছিল ২৪টি একক ব্যঞ্জনধ্বনি এবং তার সঙ্গে যুক্ত ছিল কোন এক স্বরধ্বনি। স্বরধ্বনিটি ছিল ঊহ্য এবং এটির আলাদা অস্তিত্ব ছিল না। তাই এর চিহ্নও ছিল উহ্য। একটি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের জন্য যে কোন স্বরধ্বনির সাহায্যের প্রয়োজন হত। এগুলোর দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি ছিল প্রায় ৮০টি এবং এর সঙ্গে বিভিন্ন অবস্থানে ঊহ্য থাকা যেকোন স্বরধ্বনি। দ্বিব্যঞ্জনধ্বনির চিহ্ন ছিল একটি।
মিসরীয় শব্দ শুরু হত ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে। আবার কিছু কিছু শব্দের শুরুতে স্বরধ্বনি আছে। যেমন- Amon, Osiris ইত্যাদি শব্দ। কিছু কিছু ক্রিয়াপদও শুরু হয় স্বরধ্বনি দিয়ে। কিন্তু এগুলো থাকে ব্যঞ্জনধ্বনির সংক্ষিপ্ত উচ্চারণের ক্ষেত্রে এবং ঊহ্য অবস্থায়। এই পদ্ধতিতে হায়ারোগ্লিফিকের মাধ্যমে স্বরধ্বনি ঊহ্য রেখে কেবল ব্যঞ্জনধ্বনির সাহায্যে প্রকাশ পেত এক একটি পদ। শ্রুতির ঐতিহ্য অনুসরণ করে মানুষ বোঝে নিত কোথায় কোন স্বরধ্বনির সাহায্য নিতে হবে। এভাবে মানুষ হায়ারোগ্লিফিকের প্রকৃত অর্থ বোঝে নিত। একটি উদাহরণ দেয়া যায়, যেমন-নেফারতিতির নাম লেখার সময় হায়ারোগ্লিফিকে লেখা হত nfrtt–শ্রুতির ঐতিহ্য অনুসারে মিশরীয়রা স্বরধ্বনি প্রয়োগ করে বুঝে নিত Nefertiti।