আযান – আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ

আযান মুসলিম ধর্মের অন্যতম পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ ধ্বনি, যা প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদ থেকে উচ্চারণ করা হয়। এটি মূলত নামাজের আহ্বান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আযানের প্রতিটি বাক্যে আল্লাহর মহিমা, একত্ববাদ, এবং প্রার্থনার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

 আযান এর বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থ

নিম্নে আযানের বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, এবং প্রতিটি বাক্য কতবার বলা হয় তা টেবিল আকারে প্রদান করা হলো। ইংরেজি শব্দগুলো বড় অক্ষরে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরবি বাক্যবাংলা উচ্চারণবাংলা অর্থ
الله اكبر الله اكبر
الله اكبر الله اكبر
আল্লাহু আকবার – ৪ বারআল্লাহ সর্বশক্তিমান
أشهد أن لا إله إلا الله
اشهد ان لا اله الا الله
আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – ২ বারআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই
أشهد أن محمدًا رسول الله
اشهد ان محمد الرسول الله
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ – ২ বারআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর রাসূল
حي على الصلاة
حي على الصلاة
হাইয়্যা আলাসসালাহ – ২ বারনামাজের দিকে আসুন
حي على الفلاح
حي على الفلاح
হাইয়্যা আলালফালাহ – ২ বারসফলতার দিকে আসুন
الله اكبر الله اكبرআল্লাহু আকবার – ২ বারআল্লাহ সর্বশক্তিমান
لا إله إلا اللهলা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – ১ বারআল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই

ফজরের আযানের ক্ষেত্রে একটি অতিরিক্ত বাক্য যোগ করা হয় যা অন্যান্য আযান থেকে পৃথক। নিচে টেবিল আকারে ফজরের আযানের সম্পূর্ণ বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, পুনরাবৃত্তি সংখ্যা, এবং ফজরের সময়ের অতিরিক্ত বাক্যটি দেওয়া হলো।

আরবি বাক্যবাংলা উচ্চারণবাংলা অর্থ
الله اكبر الله اكبر
الله اكبر الله اكبر
আল্লাহু আকবার(২)আল্লাহ সর্বশক্তিমান
أشهد أن لا إله إلا الله
اشهد ان لا اله الا الله
আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ(২)আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই
أشهد أن محمدًا رسول الله
اشهد ان محمد الرسول الله
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ(২)আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর রাসূল
حي على الصلاة
حي على الصلاة
হাইয়্যা আলাসসালাহ(২)নামাজের দিকে আসুন
حي على الفلاح
حي على الفلاح
হাইয়্যা আলালফালাহ (২)সফলতার দিকে আসুন
الصلاة خير من النوم
الصلاة خير من النوم
আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম (২)নামাজ ঘুমের চেয়ে উত্তম
الله اكبر الله اكبرআল্লাহু আকবার (২)আল্লাহ সর্বশক্তিমান
لا إله إلا اللهলা ইলাহা ইল্লাল্লাহ(১)আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই

আযানের গুরুত্ব ও প্রভাব

আযান শুধু নামাজের আহ্বান নয়, এটি একজন মুসলিমের জীবনের প্রতিটি ধাপে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, শ্রদ্ধা, এবং আস্থা প্রকাশের একটি মাধ্যম। আযানের প্রতিটি বাক্য মুসলিমদের ঈমানকে মজবুত করে এবং তাদের প্রতিদিনের কর্মে আল্লাহর স্মরণ রাখতে সহায়তা করে।

কুরআনে আযানের ফজিলত

আযান সম্পর্কে কুরআনে সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও নামাজ এবং আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে। আযানের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর এই বার্তাগুলোর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।

১. আল্লাহর স্মরণ

আযান মূলত আল্লাহর স্মরণ এবং তাঁর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ। কুরআনে আল্লাহর স্মরণ নিয়ে বলা হয়েছে:

“তোমরা নামাজ কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহর কাছে অবনত হও।”
(সূরা আল-হজ্জ, আয়াত ৭৭)

২. মুসলিম উম্মাহর ঐক্য

আযান মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য স্থাপন করে, কারণ এটি একসাথে সবাইকে নামাজের জন্য আহ্বান জানায়। কুরআনে বলা হয়েছে:

“নিঃসন্দেহে এই তোমার উম্মাহ এক উম্মাহ এবং আমি তোমাদের প্রতিপালক, সুতরাং তোমরা আমার ইবাদত করো।”
(সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ৯۲)

হাদীসে আযানের ফজিলত

হাদীসে আযান সম্পর্কে অনেক বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়, যেখানে আযানের ফজিলত এবং গুরুত্ব সম্পর্কে নবী করিম (সা.) এর বাণী উল্লেখিত হয়েছে।

১. শয়তান পালিয়ে যায়

হাদীসে বর্ণিত আছে, আযানের ধ্বনি শুনে শয়তান পালিয়ে যায়:

“যখন আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান পালিয়ে যায় এবং আযান শেষ হলে আবার ফিরে আসে।”
(সহীহ মুসলিম, ৩৮৮)

২. আযান দেওয়ার সওয়াব

আযান দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে:

“যে ব্যক্তি বারো বছর আযান দিল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় এবং আযানের জন্য যে কোনো মসজিদে যায়, সে প্রত্যেক কদমের জন্য একটি করে নেকি পায় এবং তার দুটি গুনাহ মাফ হয়।”
(মুসনাদ আহমদ, ৮৪১)

৩. আযানের উত্তম পুরস্কার

হাদীসে আরও বর্ণিত আছে যে, আযানের উত্তর দেওয়া ব্যক্তির জন্যও সওয়াব রয়েছে:

“যে ব্যক্তি আযানের উত্তর দেয়, সে আল্লাহর রহমতের অধিকারী হয়।”
(সহীহ মুসলিম, ৩৮৭)

উপসংহার

আযান একটি আধ্যাত্মিক ডাকে পরিণত হয়েছে, যা মুসলিমদের জন্য নামাজের জন্য আহ্বান জানায়। এটি আল্লাহর মহানতা ও অনুগ্রহের প্রতিফলন। আযানের প্রতিটি শব্দই মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তাদের প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত রাখে।

Leave a Comment