১৬ই ডিসেম্বর উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের কবিতা রয়েছে। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। আজকের এই দিন সম্পর্কে অনেক লেখক এবং কবিরা বিভিন্ন ধরনের কবিতা রচনা করেছেন। এখন ১৬ই ডিসেম্বর যে সকল কবিতা রয়েছে সেই গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
ঘুম ভাঙ্গে রোজ
-সাজজাদ হোসাইন খান
বেগুন ফুলে প্রজাপতির হাসি
কোথায় আছে এমন মজার বাঁশি
ভর দুপুরে রাখালিয়া বাজায় হেসে হেসে,
ধানের ক্ষেতে টিয়া পাখির মেলা
আসমানে যার নীল ধবলের ভেলা
হেলে দুলে জমায় পাড়ি, পাহাড় ঘেঁষে ঘেঁষে।
জোছনা মাখা চাঁদের সাদা ডিম
রাত নিশীথে ঝরায় কেমন হিম
সিক্ত করে ফুলপরীদের রঙিন যত পাখা,
অনেক ভোরে সূর্যমামা হাঁটে
উদাস করা যোজন যোজন মাঠে
সাতটি রঙের চেরাগ যেন উপুড় করে রাখা।
সরষে ফুলে হলদে হিরণ নাচে
কোন সে দেশের এমন শোভা আছে
রূপেতে যার হাজার কবি শব্দেরই জাল বোনে,
মন উড়ে যায় মাছরাঙাদের ভিড়ে
পাতার ফাঁকে টুনটুনিদের নীড়ে
ঘুম ভাঙে রোজ মুয়াজ্জিনের দরাজ গলা শুনে।
স্বাধীনতার ঋণ
-রওশন মতিন
বিজয় রথে আসাদের শার্টে উড়িয়ে নিশান,
দুঃশাসনকে রুখে দিতে প্রতিবাদের ঐক্যতান।
এদেশটা কার, উত্তাল বাংলা জাগ্রত জনতার,
বীর ইসা খাঁ, সূর্যসেন, তিতুমির আর অগ্নিবীণার।
অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু মুক্তচিত্ত অটল দীপ্ত,
বজ্রকণ্ঠে মুক্তির দিশা, স্বাধীনতার জন্য ক্ষিপ্ত।
যে রোদ্দুরে দস্যি ছেলে তেপান্তরে উড়ায় ঘুড়ি,
অবাক চোখে তাকিয়ে দ্যাখে, মুক্ত ডানার উড়াউড়ি,
সে কি জানে লাল-সবুজের এগিয়ে চলার বিজয় গাঁথা,
তার বুকে কি মেলছে ডানা লাল-সবুজের স্বাধীনতা।
দিন কি কেবল বদলে যাওয়া দিন বদলের দিন,
এই আলোতে উদ্ভাসিত বিজয় দীপ্ত স্বাধীনতার ঋণ।
বিজয় আমার
— এ কে আজাদ
বিজয় আমার
পতাকার রং
মানচিত্রের রেখা,
বিজয় আমার
আনন্দ ঘন
ভিটে-মাটি ফিরে দেখা।
বিজয় আমার
স্মৃতির মিনার
সৌধ চূড়ার গান,
বিজয় আমার
স্বাধীন দেশের
সুখভরা অফুরান।
স্বাধীনতা তুমি
– কাজী আবুল কাসেম রতন
স্বাধীনতা তুমি
বাংলা দেশের
বাংলা মায়ের
শুভেচ্ছা।
স্বাধীনতা তুমি
দাদুর মুখে
রূপকথারই
সু-কিচ্ছা
স্বাধীনতা তুমি
সূর্যে ভাষা
রক্তিম হেম।
স্বাধীনতা তুমি
মুক্তি সেনার
মুক্ত প্রেম।
স্বাধীনতা তুমি
উড়ে যাওয়া,
স্বাধীন পাখির
প্রত্যাশা।
স্বাধীনতা তুমি
প্রিয় জনতার
প্রেম প্রীতি জয়
ভালবাসা।
বিজয় দিবস
— মোস্তফা কামাল সোহাগ
ডিসেম্বরের ষোল তারিখ
বিজয় দিবস হয়
এই বিজয়টা ছিনে আনতে
লক্ষ প্রাণ ক্ষয়।
বিজয় দিবস এলে আমরা
দেশের গান গাই
রাজপথে বিজয় মিছিল
দেখে সুখ পাই।
বিজয় দিবসে বিজয় নিশান
দেখে মন ভরে
আনন্দে সব মাতোয়ারা
বাংলা মায়ের ঘরে।
যুদ্ধ করে জীবন দিয়ে
বিজয় আনলো যারা
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান
ইতিহাসে তারা।
আলো ও আঁধার
-ফরিদ আহমদ ফরাজী
আঁধার আলো মিশলেই কালো
আলো শুধুই আলো
আঁধারে কে থাকতে চায়?
আলোর প্রদীপ জ্বালো।
হালাল হারাম মিললেই হারাম
হালাল শুধুই হালাল
হালাল কে পছন্দ করেন
আল্লাহ জাল্লি-জালাল।
বিজয় তুমি
-ফরিদ আহমেদ হৃদয়
বিজয় তুমি মুক্ত একটি পাখি
গগন তলে করছ ডাকাডাকি।
বিজয় তুমি গোলাপ জবা ফুল
শীতল জলের নদীর দুটি কুল।
বিজয় তুমি চাষির ফসল মাঠ
মাঠ জুড়ে ফলে ধান, গম আর পাট।
বিজয় তুমি লাল-সবুজ পতাকা
মুক্ত হাওয়ায় উড়ছ আঁকা বাঁকা।
বিজয় তুমি মায়ের মুখের হাসি
যেই হাসিকে সবাই ভালবাসি।
বিজয় তুমি একটি স্বাধীন দেশ
নামটি হলো সোনার বাংলাদেশ।
ষোলই ডিসেম্বরে
-হোসেন মোতালেব
একটি পাখি বাসার আশে
করছে উড়াউড়ি
এ বন থেকে ঐ বনেতে
করছে ঘুরাঘুরি।
অবশেষে বাঁধল বাসা
দীর্ঘ ন’মাস পরে
সেই পাখিটা তুলল ছানা
ষোলই ডিসেম্বরে।
সেই ছানাটি জানান দিল
বিশ্ববাসী শোন
বাংগালী এক বীরের জাতি
নয়তো ভিত কোন।
লক্ষ ভাইয়ের রক্তে কেনা
সবুজ বরণ পাখি
বিশ্ব সভায় সেই পাখিটা
করছে ডাকাডাকি।
সেই পাখিটা দেয় পরিচয়
বাংলাদেশের নামে
কেনা হল সেই পাখিটা
লক্ষ প্রাণের দামে।
মানুষ ওজন
-মেজু আহমেদ খান
টাকা ছাড়া হয় না কি ভাই মানুষ ওজন।
টাকাটা তো ক্ষণস্থায়ী সে-ই কি স্বজন?
টাকা ছাড়াও মানুষ ওজন হয়
তাই টাকাটা আমার কাছে সবার আগেই নয়।
টাকা দিয়ে অনেক কিছুই যায় না কেনা ভাই
বিদ্যা বুদ্ধি মান ইজ্জত আর কাম্য অনেকটাই।
মহান বিজয়
বিজয় তুমি ১৬ই ডিসেম্বর, লাখ শহীদের রক্ত মাখা প্রাণ—
বিজয় তুমি শাশ্বত বাংলার সোনালী ফসল-সরষে ফুলের ঘ্রাণ।
বিজয় তুমি সুন্দর বনের চিত্রাহরিণ আর দোয়েল,শ্যামা,টিয়া—
বিজয় তুমি উত্তাল সমুদ্র ঘেরা, সেন্ট মার্টিন-কুতুবদিয়া।
বিজয় তুমি শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘাস,
বিজয় তুমি বিশ্বখ্যাত বাংলার সোনালী আঁশ।
বিজয় তুমি জেমসের সোনার বাংলা-আমি তোমায় ভালবাসি,
বিজয় তুমি হায়দার হোসেনের গণতন্ত্রের হাসি।
বিজয় তুমি লাখ শহীদের রক্তভেজা দান,
বিজয় তুমি লাখ বাঙালীর মুক্তি কামী প্রাণ।
বিজয় তুমি জর্জ হ্যারিসানের স্বপ্নের বাংলাদেশ—
বিজয় তুমি লজ্জাবতী পল্লী তরুনীর মেঘবরন কেশ।
বিজয় তুমি বিশ্ব মানচিত্রে নতুন একটা দেশ—
বিজয় তুমি ছিনিয়ে এনেছ সোনার বাংলাদেশ।।
মহান বিজয় দিবস
– আবু জাফর বিঃ
মহান বিজয় দিবস ১৬ডিসেম্বর, জাতির অহঙ্কার,
এ বিজয়কে রাখবো সমুন্নত এই হোক অঙ্গিকার।
একাত্তরে সাড়ে সাতকোটি বাঙালি হয়েছিল ঐক্যবদ্ধ,
২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় ৯মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের বুকের তাজা রক্ত, দিয়ে বিসর্জন,
অবশেষে হানাদার পাকিস্তানবাহিনী করল আত্মসমর্পণ।
সেদিন তারা বাঙালিদের কাছে করেছিল শীর অবনত,
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল, স্বাধীন সার্বভৌমত্ব।
মুক্তিকামী জনতা প্রায় খালি হাতে, দাঁড়িয়েছিল রুখে,
জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাষান বেঁধে বুকে।
যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা,
ভুলবো না সেই দুঃসাহসী বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা।
জীবন উৎসর্গ করে উপহার দিয়েছে লাল-সবুজের পতাকা,
এনেছে ৫৬হাজার বর্গ মাইলের স্বাধীন বাংলার সীমারেখা।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ;
৪৫বছর পরেও কি করতে পেরেছি তাদের স্বপ্ন পূরণ?
দুর হয়নি বৈষম্য বিভাজন, আসেনি অর্থনৈতিক মুক্তি,
রুখতে হবে সকল বঞ্চনা, সৃষ্টি করতে হবে গণশক্তি।
লাখো শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত আজকের এই বিজয়,
সকলে মিলে গড়বো দেশ, মানবো না কোনো পরাজয়।
★ লাল সবুজের স্মৃতি ঘেড়া নিশান আমার উড়ে।
কিনেছিলাম রক্ত দিয়ে বিজয় ডিসেম্বরে।
মাগো তোমার চোখের জলে,
জয় বাংলা ধ্বনি তুলে,
হাজার ছেলে প্রাণ দিল ঐ নতুন আশার ভোরে।
রক্ত দিয়ে কেনা এই বিজয় ডিসেম্বরে।
মাগো তুমি হায়েনা ভয়ে কাঁদছ দেখে তাই।
তোমার ছেলে ঘর ছেড়েছে তোমায় দিতে ঠাঁই
বিশ্বমাঝে উচ্চাসনে,
পাক বাহিনীর নির্যাতনে,
আর হবেনা শোষন এবার তোমার আপন ঘরে।
রক্ত দিয়ে কেনা এই বিজয় ডিসেম্বরে।