“আল্লাহ ” নামটি উচ্চারণ করলে যেন মনে একটা প্রশান্তি অনুভব হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদিস মতে মহান আল্লাহর অনেকগুলো গুনবাচক নাম রয়েছে। আর এর সংখ্যা হল ৯৯ টি। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন এর সংখ্যা ৯৯ এর অধিক প্রায় ৪০০০। নবী মুহাম্মদের (স) একজন সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তার কিছু নাম মানবজাতির অজ্ঞাত রেখেছেন। ইসলাম ধর্ম মতে বুনিয়াদি নাম বা ভিত্তি নাম একটিই। আর তা হলো আল্লাহ্।
আল্লাহর ৯৯টি নামের গুরুত্ব
আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর উপর ঈমান আনা ঈমানের স্তম্বসমূহের মধ্যে একটি। আর সে রুকুনগুলো হচ্ছে মহান আল্লাহর অস্তিত্বের ঈমান, তার প্রভুত্বের উপর ঈমান, একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে তার উপর ঈমান এবং আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর উপর ঈমান। নাম ও গুনের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তাআলাকে অদ্বিতীয় মানা তাওহীদের তিন প্রকারের মধ্যে একটি। সেগুলো হচ্ছে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ (প্রভুত্বের একত্ব), তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ (ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ব) তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত (নাম ও গুনের ক্ষেত্রে একত্ব) তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত এর গুরুত্ব অনেক। আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে যথাযত জ্ঞান না থাকলে তা কোন ব্যক্তিকে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদাত করার সুযোগ দেয় না।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“আর আল্লাহর জন্যে রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাকে সেসব নামের মাধ্যমেই ডাক। “
আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ ফজিলত
১. الله – আল্লাহ – আল্লাহ
যদি কেউ প্রতিদিন এই নামটি ১০০০ বার পাঠ করে, তবে আল্লাহ আপনার হৃদয় থেকে সমস্ত সন্দেহ এবং অনিশ্চয়তা দূর করবেন এবং দৃঢ় সংকল্প ও বিশ্বাসের ব্যবস্থা করবেন।
২. الرَّحْمَنُ – আর-রহমান – সবচাইতে দয়ালু, কল্যাণময়, করুণাময়
যিনি প্রত্যেক ফরয (বাধ্যতামূলক) নামাজের পর এই নামটি ১০০ বার পাঠ করবে আল্লাহ তার স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দিবেন, এবং ভারী হৃদয় থেকে মুক্ত হবে।
৩. الرحيم – আর-রহী’ম – অতিশয়-মেহেরবান
যিনি প্রত্যেক ফজর নামাজের পরে এই নামটি ১০০ বার পাঠ করবে তিনি প্রত্যেকে তার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হতে দেখবেন এবং তিনি সমস্ত দুনিয়াবী বিপর্যয় থেকে নিরাপদ থাকবেন।
৪. الْمَلِكُ – আল-মালিক – অধিপতি
যে ফজরের নামাজের পরে প্রতিদিন এই নামটি বহুবার পাঠ করে সে আল্লাহর অনুগ্রহে ধনী হবে।
৫. الْقُدُّوسُ – আল-ক্বুদ্দূস – পূতঃপবিত্র, নিখুঁত
প্রতিদিন যদি কেউ এটি ১০০ বার পাঠ করে তবে বিপদ কখনই কাছে আসে না।
৬. السَّلَامُ – আস-সালাম – শান্তি এবং নিরাপত্তার উৎস, ত্রাণকর্তা
যে ব্যক্তি এই নামটি অসুস্থ ব্যক্তির কাছে ১৬০ বার পাঠ করবে , আল্লাহ তাকে সুস্থ করতে সহায়তা করবেন যিনি এই নামটি ঘন ঘন পাঠ করবে আল্লাহ তাকে সমস্ত দুনিয়াবী বিপদ থেকে নিরাপদ রাখবেন ।
৭. الْمُؤْمِنُ – আল-মু’মিন – জামিনদার, সত্য ঘোষণাকারী
এই নামটি ৬৩১ বার পাঠ করলে সে ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকবে।
৮. الْمُهَيْمِنُ – আল-মুহাইমিন – অভিভাবক, প্রতিপালক
যে গোসল করে দুই রাকাত নামায আদায় করে এবং এই নামটি আন্তরিকভাবে একাগ্রতার সাথে ১০০ বার পাঠ করে, আল্লাহ তার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থাও পবিত্র করেন।
৯. الْعَزِيزُ – আল-’আযীয – সর্বশক্তিমান, সবচেয়ে সম্মানিত
যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাযের পরে ৪১ বার এই নামটি পাঠ করে সে অন্যের কাছ থেকে প্রয়োজনের বাইরে স্বাধীন হবে এবং অপমানের পরে সম্মান অর্জন করবে।
১০. الْجَبَّارُ – আল-জাব্বার – দুর্নিবার, সমুচ্চ, মহিমান্বিত
যে এই নামটি বার বার পাঠ করে সে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য হবে না, এবং সহিংসতা, তীব্রতা বা কঠোরতার দ্বারা প্রকাশিত হবে না।
১১. الْمُتَكَبِّرُ – আল-মুতাকাব্বির – সর্বশ্রেষ্ঠ, গৌরবান্বিত
যে ব্যক্তি এই নামটি অধিক পাঠ করে তাকে মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া হবে। প্রতিটি কাজ শুরুর সময় যদি তিনি এই নামটি বারবার পুনরাবৃত্তি করেন তবে তিনি আল্লাহর অনুগ্রহে সাফল্য অর্জন করবেন।
১২. الْخَالِقُ – আল-খলিক্ব – সৃষ্টিকর্তা
যদি কোন ব্যক্তি টানা ৭ দিন ধরে দৈনিক ১০০ বার এই নামটি পাঠ করে আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য একজন ফেরেশতা নিয়োগ করে দেন।
১৩. الْبَارِئُ – আল-বারি’ – বিবর্ধনকারী, নির্মাণকর্তা, পরিকল্পনাকারী
এই নামটি কেবলমাত্র ইঙ্গিত দেয় যে আল্লাহ সব কিছু অনুপাতে তৈরি করেছেন।
১৪. الْمُصَوِّرُ – আল-মুসউয়ির – আকৃতিদানকারী
২১ বার এই নামটি পাঠ করুন এবং পানিতে ফুঁক দিয়ে একটানা ৭ দিন এটি চালিয়ে যান। রোজা ভাঙার জন্য পানিটি ব্যবহার করুন। ইনশাআল্লাহ, মহিলারা শীঘ্রই একটি সন্তানের দ্বারা আশীর্বাদ পাবেন।
১৫. الْغَفَّارُ – আল-গফ্ফার – পুনঃপুনঃ মার্জনাকারী
যে এই নামটি বারবার করে পাঠ করবে আল্লাহ তার পাপ ক্ষমা করে দিবেন।
১৬. الْقَهَّارُ – আল-ক্বহ্হার – দমনকারী
যে ব্যক্তি এই নামটি অধিক পাঠ করবে আল্লাহ তার মনের ইচ্ছা পূরণ করবেন। তার হৃদয়কে পৃথিবীর আকর্ষণ দূরে রাখা হবে এবং অন্তরে শান্তি লাভ করবে। এই নামটি অন্যায় থেকে মুক্তিও দেয়।
১৭. الْوَهَّابُ – আল-ওয়াহ্হাব – স্থাপনকারী
এটি ঘন ঘন পাঠ করলে দারিদ্র্য দূর হবে। চশতের নামাজের শেষ সেজদায় এটি ৪০ বার পাঠ করা ব্যক্তিকে অনাহার থেকে মুক্তি দেয়।
১৮. الرَّزَّاقُ – আর-রযযাক্ব – প্রদানকারী
যে ব্যক্তি এই নামটি বারবার পাঠ করবে তাকে আল্লাহ তায়ালা রিযিক দান করবেন।
১৯. الْفَتَّاحُ – আল-ফাত্তাহ – প্রারম্ভকারী, বিজয়দানকারী
যে এই নামটির বারবার পাঠ করবে তার হৃদয় উদার হবে এবং তাকে বিজয় দেওয়া হবে।
২০. الْعَلِيمُ – আল-’আলীম – সর্বজ্ঞানী, সর্বদর্শী
যে ব্যক্তি এই নামটি অধিক পাঠ করবে স্বর্গের আলো দ্বারা তার হৃদয় আলোকিত হবে।
২১. الْقَابِضُ – আল-ক্ববিদ – নিয়ন্ত্রণকারী, সরলপথ প্রদর্শনকারী
যে এই নামটি ৪ টি টুকরো খাবার (ফল, রুটি ইত্যাদি) এ পাঠ করে এবং 40 দিন ধরে খায় সে ক্ষুধা থেকে মুক্ত থাকবে।
২২. الْبَاسِطُ – আল-বাসিত – প্রসারণকারী
যে ব্যক্তি চশতের নামাযের পরে দুই হাত উঁচু করে ১০ বার এই নামটি পাঠ করে, তারপরে হাত দিয়ে মুখটি ঘষে, সে অভাব থেকে মুক্ত হবে।
২৩. الْخَافِضُ – আল-খফিদ্ব – (অবিশ্বাসীদের) অপমানকারী
যারা তিন দিন রোযা রেখে এবং চতুর্থ দিনে একত্রিত হয়ে এই নামটি ৭০ বার বার করে পাঠ করবে , আল্লাহ তাদের শত্রু দ্বারা ক্ষতি থেকে মুক্তি দেবেন। যে ব্যক্তি এই নামটি প্রতিদিন ৫০০ বার করে পাঠ করবে তার প্রয়োজনীয়তা আল্লাহ পূর্ণ করবেন।
২৪. الرَّافِعُ – আর-রফীই’ – উন্নীতকারী
যে এই নামটি দিনরাত ১০১ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে সম্মান, ঐশর্য এবং যোগ্যতার দিক থেকে উচ্চতর করে তুলবেন।
২৫. الْمُعِزُّ – আল-মুই’জ্ব – সম্মানপ্রদানকারী
যে ব্যক্তি সোমবার বা শুক্রবার রাতে মাগরিবের নামাজের পরে ১৪০ বার এই নামটি পাঠ করবে , আল্লাহ তাকে অন্যের চোখে সম্মানিত করবেন । সে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে না।
২৬. الْمُذِلُّ – আল-মুদ্বি’ল্লু – (অবিশ্বাসীদের) বেইজ্জতকারী
যে এই নামটি ৭৫ বার পাঠ করবে তার পক্ষে যারা ঈর্ষা করে এবং ক্ষতি করতে চায় তাদের দ্বারা সে ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকবে। আল্লাহ তাকে রক্ষা করবেন।
২৭. السَّمِيعُ – আস-সামী’ – সর্বশ্রোতা
যে ব্যক্তি এই নামটি ৫০০, ১০০ বা ৫০ বার বৃহস্পতিবার চশতের নামাজের পরে কারও সাথে কথা না বলে পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে যা চান তা দান করবেন।
২৮. الْبَصِيرُ – আল-বাছীর – সর্বদ্রষ্টা, সর্ববিষয়-দর্শনকারী
যে ব্যক্তি শুক্রবার বিকেলে নামাজের পরে এই নামগুলি ১০০ বার পুনরাবৃত্তি করে আল্লাহ তাআলা এই ব্যক্তিকে তার দৃষ্টিতে আলোকিত করবেন এবং তাঁর হৃদয় আলোকিত করবেন।
২৯. الْحَكَمُ – আল-হা’কাম – বিচারপতি, অটল বিচারক
যে রাতে এই নামটি বহুবার পাঠ করবে, তার কাছে অনেক রহস্য প্রকাশিত হবে ।
৩০. الْعَدْلُ – আল-আ’দল – নিখুঁত, পরিপূর্ণ-ন্যায়বিচারক
শুক্রবার রাতে বা দিনে আপনি যদি এই নামটি কোনও রুটির টুকরোতে লিখে খেয়ে থাকেন তবে লোকে আপনার কথা মানবে।
৩১. اللَّطِيفُ – আল-লাতীফ – অমায়িক, সকল-গোপন-বিষয়ে-অবগত, অপ্রকাশ্য বিষয় ও সূক্ষ্ম বিষয়াবলী সম্পর্কে অবগত
যে প্রতিদিন এই নামটি ১৩৩ বার পাঠ করবে আল্লাহ তার তার উপার্জন বৃদ্ধি করে দিবেন।
৩২. الْخَبِيرُ – আল-খবীর – সম্যক অবগত, সকল ব্যাপারে জ্ঞাত
যদি কোনও ব্যক্তি স্বার্থপর বাসনা এবং খারাপ অভ্যাসের শিকার হন তবে তিনি নিয়মিত এই নামটি পাঠ করলে তিনি সেগুলি থেকে মুক্তি পাবেন।
৩৩. الْحَلِيمُ – আল-হ়ালীম- ধৈর্যবান, প্রশ্রয়দাতা
যিনি এই নামটি কাগজের টুকরোতে লিখে, এটি জল দিয়ে ধুয়ে ফেলেন এবং যে কোনও কিছুতে সেই জলটি ছিটিয়ে দেয় তিনি ক্ষতি এবং বিপর্যয় থেকে নিরাপদ হয়ে যাবেন ।
৩৪. الْعَظِيمُ – আল-’আযীম – সুমহান
৩৫. الْغَفُورُ – আল-গ’ফূর – মার্জনাকারী
৩৬. الشَّكُورُ – আশ-শাকূর – সুবিবেচক
৩৭. الْعَلِيُّ – আল-’আলিই – মহীয়ান
৩৮. الْكَبِيرُ – আল-কাবীর – সুমহান
৩৯. الْحَفِيظُ – আল-হা’ফীজ – সংরক্ষণকারী
৪০. الْمُقِيتُ – আল-মুক্বীত – লালনপালনকারী
৪১. الْحَسِيبُ – আল-হাসীব – হিসাব-গ্রহণকারী
৪২. الْجَلِيلُ – আল-জালীল – গৌরবান্বিত
৪৩. الْكَرِيمُ – আল-কারীম – উদার, অকৃপণ, সুমহান দাতা
৪৪. الرَّقِيبُ – আর-রক্বীব – সদা জাগ্রত,অতন্দ্র পর্যবেক্ষণকারী, তত্ত্বাবধায়ক
৪৫. الْمُجِيبُ – আল-মুজীব – সাড়া দানকারী, উত্তরদাতা, জবাব-দানকারী, কবুলকারী
৪৬. الْوَاسِعُ – আল-ওয়াসি’- অসীম, সর্বত্র বিরাজমান
৪৭. الْحَكِيمُ – আল-হাকীম – সুবিজ্ঞ, সুদক্ষ
৪৮. الْوَدُودُ – আল-ওয়াদূদ – স্নেহশীল
৪৯. الْمَجِيدُ – আল-মাজীদ – মহিমান্বিত
৫০. الْبَاعِثُ – আল-বা‘ইস – পুনরুত্থানকারী
৫১. الشَّهِيدُ – আশ-শাহীদ – সাক্ষ্যদানকারী
৫২. الْحَقُّ – আল-হাক্ক্ব – প্রকৃত সত্য,
৫৩. الْوَكِيلُ – আল-ওয়াকীল – সহায় প্রদানকারী,আস্থাভাজন, উকিল
৫৪. الْقَوِيُّ – আল-ক্বউই – ক্ষমতাশালী
৫৫. الْمَتِينُ – আল মাতীন – সুদৃঢ়, সুস্থির
৫৬. الْوَلِيُّ – আল-ওয়ালিই – বন্ধু, সাহায্যকারী, শুভাকাঙ্ক্ষী
৫৭. الْحَمِيدُ – আল-হা’মীদ – সকল প্রশংসার দাবীদার, প্রশংসনীয়
৫৮. الْمُحْصِي – আল-মুহছী – বর্ণনাকারী, গণনাকারী
৫৯. الْمُبْدِئُ – আল-মুব্দি’ – অগ্রণী, প্রথম প্রবর্তক, সৃজনকর্তা
৬০. الْمُعِيدُ – আল-মু’ঈদ – পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী, পুনরূদ্ধারকারি
৬১. الْمُحْيِي – আল-মুহ’য়ী – জীবনদানকারী
৬২. الْمُمِيتُ – আল-মুমীত – ধ্বংসকারী, মৃত্যু আনয়নকারী
৬৩. الْحَيُّ – আল-হাইয়্যু – চিরঞ্জীব, যার কোন শেষ নাই
৬৪. الْقَيُّومُ – আল-ক্বইয়ূম – অভিভাবক, জীবিকানির্বাহ প্রদানকারী
৬৫. الْوَاجِدُ – আল-ওয়াজিদ – পর্যবেক্ষক, আবিষ্কর্তা, চিরস্থায়ী
৬৬. الْمَاجِدُ – আল-মাজিদ – সুপ্রসিদ্ধ
৬৭. الْوَاحِدُ – আল-ওয়াহি’দ – এক, অনন্য, অদ্বিতীয়
৬৮. الصَّمَدُ – আস-সমাদ – চিরন্তন, অবিনশ্বর, নির্বিকল্প, সুনিপুণ, স্বয়ং সম্পূর্ণ
৬৯. الْقَادِرُ – আল-ক্বদির – সর্বশক্তিমান
৭০. الْمُقْتَدِرُ – আল-মুক্বতাদির – প্রভাবশালী, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী
৭১. الْمُقَدِّمُ – আল-মুক্বদ্দিম – অগ্রগতিতে সহায়তা প্রদানকারী
৭২. الْمُؤَخِّرُ – আল-মুয়াক্খির – বিলম্বকারী, অবকাশ দানকারী
৭৩. الْأَوَّلُ – আল-আউয়াল – সর্বপ্রথম, যার কোন শুরু নাই
৭৪ الْآخِرُ – আল-আখির – সর্বশেষ, যার কোন শেষ নাই
৭৫. الظَّاهِرُ – আজ-জ’হির – সুস্পষ্ট, সুপ্রতীয়মান, বাহ্য (যা কিছু দেখা যায়)
৭৬. الْبَاطِنُ – আল-বাত্বিন – লুক্কায়িত, অস্পষ্ট, অন্তরস্থ (যা কিছু দেখা যায় না)
৭৭. الْوَالِيَ – আল-ওয়ালি – সুরক্ষাকারী বন্ধু, অনুগ্রহকারী, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রভু
৭৮. الْمُتَعَالِي – আল-মুতা’আলী – সর্বোচ্চ মহিমান্বিত, সুউচ্চ
৭৯. الْبَرُّ – আল-বার্র – কল্যাণকারী
৮০. التَّوَّابُ – আত-তাওয়াব – বিনম্র, সর্বদা আবর্তিতমান
৮১. الْمُنْتَقِمُ – আল-মুন্তাক্বিম – প্রতিফল প্রদানকারী
৮২. الْعَفُوُّ – আল-’আফুউ – শাস্তি মউকুফকারী, গুনাহ ক্ষমাকারী
৮৩. الرَّءُوفُ – আর-র’ওফ – সদয়, সমবেদনা প্রকাশকারী
৮৪. مَالِكُ الْمُلْكِ – মালিকুল মুলক্ – সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী
৮৫. ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ – জুল জালালি ওয়াল ইকরম – মর্যাদা ও ঔদার্যের প্রভু
৮৬. الْمُقْسِطُ – আল-মুক্বসিত – ন্যায়পরায়ণ, প্রতিদানকারী
৮৭. الْجَامِعُ – আল-জামি’ – একত্র আনয়নকারী, ঐক্য সাধনকারী
৮৮. الْغَنِيُّ – আল-গ’নিই – ঐশ্বর্যবান, স্বতন্ত্র
৮৯. الْمُغْنِي – আল-মুগ’নি – সমৃদ্ধকারী, উদ্ধারকারী
৯০. الْمَانِعُ – আল-মানি’ – প্রতিরোধকারী, রক্ষাকর্তা
৯১ الضَّارُّ – আদ্দর – যন্ত্রণাদানকারী, উৎপীড়নকারী
৯২. النَّافِعُ – আন-নাফি’ – অনুগ্রাহক, উপকর্তা, হিতকারী
৯৩. النُّورُ – আন-নূর – আলোক
৯৪. الْهَادِي – আল-হাদী – পথপ্রদর্শক
৯৫. الْبَدِيعُ – আল-বাদী’- অতুলনীয়, অনিধগম্য
৯৬. الْبَاقِي – আল-বাকী – অপরিবর্তনীয়, অনন্ত, অসীম, অক্ষয়
৯৭. الْوَارِثُ – আল-ওয়ারিস’ – সবকিছুর উত্তরাধিকারী
৯৮. الرَّشِيدُ – আর-রশীদ – সঠিক পথের নির্দেশক
৯৯. الصَّبُورُ – আস-সবূর – ধৈর্যশীল
ইসলামিক পরিভাষায় আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নাম
বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ একটি নাম রয়েছে। ইসলামিক পরিভাষায় একে ইসমে আজম (অর্থ: “সর্বশ্রেষ্ঠ নাম”) বলা হয়। এবং কেউ যদি এই নামসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, সেটা তিনি (আল্লাহ) অবশ্যই কবুল করবেন।
বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে। যেমন, এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মুহাম্মাদ (সাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন সালাতে তাশাহহুদে সে এ বলে দুআ করছে:
“ | হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি -এ কথার উসীলায় যে, সকল প্রশংসা আপনার, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি দানশীল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, হে মহামহিম ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব ও সর্ব সত্তার ধারক!- আপনার কাছে জান্নাত চাইছি এবং মুক্তি চাইছি জাহান্নাম থেকে। | ” |
তখন নবী এই প্রার্থনা শুনে তার সাহাবীদের বললেন:
“ | তোমরা কি জানো, সে কি দিয়ে দুআ করেছে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন, সে আল্লাহর মহান নাম দিয়ে দুআ করেছে। যে ব্যক্তি এ নামের মাধ্যমে দুআ করবে তার দুআ তিনি কবুল করবেন। (অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, ইসমে আজম দিয়ে দুআ করেছে) | ” |
অপর এক হাদিসে তিনি বলেন:
“ | ইউনুস এর প্রার্থনা (লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন অর্থঃ আপনি ছাড়া কোন মা’বূদ নেই; আপনি পবিত্র, মহান; আমিতো সীমালংঘনকারী।) -যখন তিনি মাছের পেটে ছিলেন- তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমালংঘনকারী। যে কোনো মুসলিম এ কথা দিয়ে প্রার্থনা করবে তার প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করবেন। | ” |
তবে হাদিসসমূহে সুনির্দিষ্ট করে কোন একটি নামের কথা উল্লেখ করা হয় নি, যার কারণে ঠিক কোন নামটি সেই ইসমে আজম, সেটা নিয়ে ইসলামী ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের ভিতরে ব্যাপক মতভেদ আছে। কারো কারো মতে, যেহেতু এই নামটি দুআ’ কবুলের ব্যপারে খুবই শক্তিশালী (অর্থাৎ, ব্যক্তিবিশেষ অসৎ উদ্দেশ্যে সেটা ব্যবহার করতে পারে), তাই আল্লাহ তাআলা নিজে (এবং সেই অনুযায়ী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও এই নামটি জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি।
এই নামগুলো দ্বারা কোনো ব্যক্তির নামকরণ
ইসলামিক মতানুসারে, হুবহু এই নামগুলো দ্বারা কোনো ব্যক্তির নামকরণ করার অনুমতি নেই। উদাহরণস্বরূপ: কারো নাম সরাসরি “আল-মালিক” রাখা যাবে না, বরং “মালিক” রাখা যেতে পারে। এটা এই বিশ্বাসের কারণে যে, কোনো সৃষ্টি, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ’র সমকক্ষ হতে পারে না। তাই নামগুলো ব্যবহার করা যাবে; কিন্তু “আল-” শব্দাংশ-সহ ব্যবহার করা যাবে না। অধিকন্তু, কিছু নাম ব্যবহার করা একেবারেই নিষিদ্ধ; কারণ সেই গুণাবলীগুলো মানুষের সম্পূর্ণ আয়ত্তের বাইরে। যেমন: “আল্লাহ”, “খালিক্ব” ইত্যাদি।
তবে, যেকোনো নামের প্রথমে (ক্ষেত্রভেদে) “আব্দ”/”আব্দুল”/”আব্দুর”/”আব্দুস” শব্দাংশ (বাংলায় যার অর্থ “দাস” বা “গোলাম”) যোগ করে সেটাকে কোনো ব্যক্তির নাম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। যেমন: “খালিক্ব” (অর্থাৎ “সৃষ্টিকর্তা”) ব্যক্তির নাম হিসেবে নিষিদ্ধ হলেও “আব্দুল খালিক্ব” (অর্থাৎ “সৃষ্টিকর্তার গোলাম”) নামটি খুবই গ্রহণযোগ্য এবং মুসলমান সমাজে প্রচলিত।