প্রসব বা বাচ্চা জন্মদান হলো সেই প্রক্রিয়া যা দ্বারা একজন গর্ভবতী মহিলা তার শিশুকে গর্ভফুল থেকে নির্গত করেন। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়, যা প্রতিটিরই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও সময়সীমা রয়েছে।
১. প্রাথমিক পর্যায় (First Stage)
এই পর্যায়টি শুরু হয় যখন মায়ের গর্ভফুল বা সার্ভিক্স প্রসারিত হতে শুরু করে।
- প্রাথমিক-লাটেন্ট ফেজ: এই সময়ে গর্ভফুল প্রায় ৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হয়। সংকোচন (contraction) সাধারণত হালকা এবং অনিয়মিত হতে পারে।
- অ্যাকটিভ ফেজ: গর্ভফুল ৪ সেন্টিমিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হয়। সংকোচন আরও শক্তিশালী, নিয়মিত এবং ঘন ঘন হয়।
২. দ্বিতীয় পর্যায় (Second Stage)
এই পর্যায়টি শুরু হয় যখন গর্ভফুল পুরোপুরি প্রসারিত হয় এবং প্রয়োজনীয় চাপে শিশুকে বের করে আনা হয়। এটি "পুশিং স্টেজ" নামেও পরিচিত।
- এই সময়ে মায়ের প্রচেষ্টা এবং চিকিৎসকদের নির্দেশনা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- শিশুর মাথা প্রথমে বের হয়, তারপর ধীরে ধীরে বাকি দেহ।
৩. তৃতীয় পর্যায় (Third Stage)
এই পর্যায়টি শুরু হয় যখন শিশু জন্মগ্রহণ করে এবং মায়ের গর্ভাশয় থেকে প্লাসেন্টা (প্ল্যাসেন্টা) বের করা হয়।
- প্লাসেন্টা এবং এর সাথে সংযুক্ত ঝিল্লি শরীর থেকে বের করা হয়।
- এই প্রক্রিয়াটি কিছু মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ হতে পারে।
প্রসবের ধরণ:
- প্রাকৃতিক (Normal Vaginal Delivery): সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি।
- সিজারিয়ান সেকশন (C-Section): যখন স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব নয় বা ঝুঁকিপূর্ণ, তখন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু বের করা হয়।
ঝুঁকি ও জটিলতা:
প্রসবের সময় অনেক ধরণের ঝুঁকি ও জটিলতা থাকতে পারে যেমন:
- প্রি-একলাম্পসিয়া
- প্ল্যাসেন্টাল সমস্যা
- ব্রিচ প্রেজেন্টেশন
- শিশুর হৃদস্পন্দনের সমস্যা
প্রসব পরবর্তী পরিচর্যা:
প্রসবের পর মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- মায়ের পোস্টপার্টাম হেলথ চেকআপ।
- শিশুর হেলথ চেকআপ এবং টিকাদান।
প্রসব একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা মা এবং শিশুর উভয়েরই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। সঠিক চিকিৎসা এবং পরিচর্যার মাধ্যমে এই সময়কে নিরাপদ এবং স্বস্তিদায়ক করা সম্ভব।