যক্ষ্মা বা টিবি রোগ কি?

যক্ষ্মা বা টিবি (টিউবারকুলোসিস) একটি সংক্রামক রোগ যা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি প্রধানত ফুসফুসকে আক্রমণ করে, তবে এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক, এবং মেরুদণ্ড। যক্ষ্মা একটি প্রাচীন রোগ, কিন্তু এখনো বিশ্বজুড়ে একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা।

যক্ষ্মার সংক্রমণ

যক্ষ্মা সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে এক ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়ায়। একজন যক্ষ্মারোগী যখন কাশি, হাঁচি, কথা বলে বা গান করে, তখন তার মুখ থেকে ছোট ছোট কণায় ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এয়ারবর্ন কণার মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং তাকে সংক্রমিত করতে পারে।

যক্ষ্মার লক্ষণ

যক্ষ্মার লক্ষণ সাধারণত ধীরে ধীরে দেখা দেয় এবং অনেক সময় মাসের পর মাস ধরে থাকতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:

  1. দীর্ঘস্থায়ী কাশি: তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকা কাশি।
  2. কাশির সঙ্গে রক্ত আসা: কাশির সময় রক্ত আসা।
  3. ওজন কমে যাওয়া: অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমে যাওয়া।
  4. রাতে ঘাম হওয়া: রাতের বেলা ঘাম হওয়া, এমনকি শীতকালে।
  5. জ্বর ও ক্লান্তি: সাধারণত সন্ধ্যার দিকে জ্বর এবং সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করা।
  6. বুকের ব্যথা: শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এবং বুকের ব্যথা।

যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়:

  • চর্ম পরীক্ষা: Mantoux টেস্ট
  • X-ray: বুকের X-ray
  • শ্বাস পরীক্ষা: spirometry
  • কফ পরীক্ষা: microscopy and culture

যক্ষ্মার ধরণ

যক্ষ্মা মূলত দুই প্রকারের হতে পারে:

  1. প্রাথমিক যক্ষ্মা সংক্রমণ (Latent TB): এই অবস্থায়, ব্যাকটেরিয়া শরীরে উপস্থিত থাকলেও রোগের কোন লক্ষণ দেখা যায় না এবং এটি সংক্রমিত নয়। তবে, এটি পরবর্তীতে সক্রিয় টিবি রোগে রূপান্তরিত হতে পারে।
  2. সক্রিয় যক্ষ্মা রোগ (Active TB): এই অবস্থায়, ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় থাকে এবং রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

যক্ষ্মার চিকিৎসা

যক্ষ্মার চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপির মাধ্যমে করা হয়, যা ৬-৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কিছু প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক যা যক্ষ্মার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় তা হল:

  1. আইসোনিয়াজিড (Isoniazid)
  2. রিফ্যাম্পিসিন (Rifampicin)
  3. ইথামবুটল (Ethambutol)
  4. পাইরাজিনামাইড (Pyrazinamide)

সহায়ক চিকিৎসা: জ্বর, কাশি এবং ব্যথার জন্য ওষুধ।

প্রতিরোধ ও সতর্কতা

যক্ষ্মা প্রতিরোধে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে:

  1. ভ্যাকসিনেশন: বিসিজি (BCG) ভ্যাকসিন শিশুদের যক্ষ্মা থেকে রক্ষা করতে পারে।
  2. সংক্রামিত ব্যক্তিদের বিচ্ছিন্ন রাখা: যক্ষ্মা রোগীকে আলাদা রাখা এবং চিকিৎসা শুরু করা।
  3. পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল: ঘরের ভিতরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করা।
  4. মাস্ক ব্যবহার: সংক্রমিত ব্যক্তিদের জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।

উপসংহার

যক্ষ্মা একটি গুরুতর রোগ যা যথাযথ চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে এটি জীবনঘাতী হতে পারে। সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

আরও তথ্যের জন্য:

Leave a Comment