বিজয় দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর পালিত হয় এবং বাংলাদেশে একটি জাতীয় ছুটি। ১৯৭১ সালের এই দিনেই বাংলাদেশ পাকিস্তানি শক্তির বিরুদ্ধে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিল, যা দেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিল।
ইতিহাস:
- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভাজনের পর পাকিস্তান দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত হয়েছিল: পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমানে পাকিস্তানের মূল অংশ)। পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক বৈষম্য ছিল যা বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানে বিশাল ক্ষোভ তৈরি করেছিল।
- মার্চ ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সূচনা: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের সূচনা করে এবং পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। পঁচিশে মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি সৈন্যরা অপারেশন সার্চলাইট নামে একটি বর্বর অভিযান শুরু করে, যা মুক্তিযুদ্ধের পেছনের প্রধান কারণ ছিল।
- ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: টানা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে মিত্রবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখে।
বিজয় দিবস উদযাপন:
- জাতীয় পতাকা উত্তোলন: বিজয় দিবসে সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
- শ্রদ্ধাঞ্জলি: শহীদ মিনারে জাতীয় স্তরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
- প্যারেড: ঢাকা মহানগরীতে বিজয় দিবসের একটি বিশেষ প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের সামরিক এবং আধাসামরিক বাহিনী অংশগ্রহণ করে।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: সারাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা এবং প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি স্মরণ করা হয়।
- প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ভাষণ: বিজয় দিবসে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করেন।
বিজয় দিবস বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক গর্বের স্মারক। এই দিনটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় অবদান এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি চিরস্থায়ী করতে বিশেষভাবে পালন করা হয়।