আমরা অনেকেই মনে করি কি ও কী-এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, দুটোর যেকোনো একটা লিখলেই চলে। প্রথমত: ‘কী’ ও ‘কি’ দুটি সম্পূর্ণ আলাদা শব্দ এবং একটির জায়গায় অন্যটি ব্যবহার করা মারাত্মক ভুল।
এই দুটি শব্দের পার্থক্য বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হল, এই দুটিই প্রশ্নবাচক শব্দ এবং সমস্ত প্রশ্নেরই একটি উত্তর থাকে। ওই উত্তরই বলে দেবে কোন বানানটি ঠিক।
প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ হয়, তাহলে ‘কি’ হবে।
যেমন: তুমি কি পড়ছো? উঃ- হ্যাঁ/না
প্রশ্নের উত্তর যদি অন্য কিছু হয়, অর্থাৎ অন্য কোনো শব্দের দ্বারা দিতে হয়, তাহলে ‘কী’ বানান হবে।
যেমন: তুমি কী পড়ছো? উঃ- বাংলা ব্যাকরণ।
এইটুকু শিখলেই মোটামুটি ভাবে কাজ চলে যাবে, কিন্তু বিষয়টি আর একটু বিশদে জেনে নেওয়া দরকার আছে।
‘কি’ ও ‘কী’-এর পদ-পরিচয়
কি
‘কি’ পদটি একটি অব্যয় পদ। এটি একটি প্রশ্নবাচক অব্যয়। এটি অনেক সময় সংশয়সূচক অব্যয় হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
‘কি’-এর ব্যবহার
প্রশ্নসূচক অব্যয় হিসেবে:
তুমি কি যাবে? সে কি আজ আসবে? তোমরা কি এখন পড়াশোনা করবে না?
সংশয়-সূচক অব্যয় হিসেবে:
সে কি আর কখনও ফিরবে! ওইটুকু ছেলে কি একা একা এতটা পথ যেতে পারবে!
অবজ্ঞার ভাব বোঝাতে অব্যয় হিসেবে:
সাধে কি তোকে গাধা বলি! জানলে কি আর বলতাম না!
কী
‘কী’ পদটি একটি সর্বনাম পদ। এটি একটি প্রশ্নসূচক সর্বনাম। তবে বিস্ময়বোধক অব্যয় হিসেবেও এর ব্যবহার আছে।
প্রশ্নবোধক সর্বনাম হিসেবে:
তুমি কী খেয়েছো? (উঃ- ভাত বা অন্য কিছু)
আমার জন্য কী এনেছো?
বিস্ময়সূচক অব্যয় হিসেবে:
কী ভয়ানক দৃশ্য!
কী! তুমি এই কাজ করতে পারলে?
বাক্যে কী-র ব্যবহার কখন হয়?
প্রশ্নের উত্তর যখন হ্যাঁ বা না-তে দেওয়া যায় না, অন্য কোনো শব্দ বা বাক্যে উত্তর দিতে হয়, তখন ‘কী’ ব্যবহার করতে হয়।
যেমন: তুমি কী খেলে? উত্তর: ভাত।
তুমি কী পড়ছ? উত্তর: ইতিহাস।
এছাড়াও আরও কয়েকটি নিয়ম:
- নাকি, বইকি প্রভৃতি যৌগিক শব্দগুলিতে ‘কি’ লিখতে হয়।
- বিকল্প বোঝাতে ‘কি’ লিখতে হয়। যেমন: আজ কি কাল, একদিন যেতেই হবে।
- বিকল্পে পর পর দু বার প্রয়োগে ‘কী’ লিখতে হবে। যেমন: “কী রাম, কী শ্যাম, দুজনেই সমান শয়তান।”
- আলঙ্কারিক অব্যয় হিসেবে ‘কী’ লিখতে হয়। যেমন: সত্যি বলতে কী, তোমাকে আমি বিশ্বাস করি না।
- আবেগ প্রকাশে টেনে উচ্চারণ করার কারণে ‘কী’ লেখাই নিয়ম। যেমন: কী, এতবড় সাহস!